বাংলাদেশের দক্ষিণে সুন্দরবনের নিকটে ভারত সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলা। সাতক্ষীরা থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার উত্তরে কলারোয়া উপজেলা। এই
উপজেলার অন্তর্গত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ‘সোনাই নদী’। এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। চারিদিকে গাছগাছালিতে ভরা ছায়াঘেরা সোনাবাড়িয়া গ্রাম, মাঠের ভিতর দিয়ে চলে গেছে সরু পাকা রাস্তা। ব্রিটিশ
আমলে এখানে রেশম ও কার্পাস বস্ত্রের কারখানা ছিল। প্রকৃতি আর প্রত্নতত্ত্বের
এক সংমিশ্রন আছে গ্রামটিতে।
এই গ্রামের একটি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন
হলো শ্যামসুন্দর মন্দির। স্থানীয়ভাবে এটি ‘সোনাবাড়িয়া মঠ’ নামে পরিচিত। কারো কারো মতে এটি প্রায় চারশত বছরের পুরনো যা বুদ্ধের অনুসারীরা নির্মান করেছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে তারা চলে গেলে এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হত।
তবে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, জনৈক হরিরাম দাস (মতান্তরে দুর্গাপ্রিয় দাস) ১৬৮৯ শকাব্দে অর্থাৎ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির নির্মান করেন। মন্দিরের দেয়ালে লেখা আছে ‘শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির’। মন্দিরের
দেয়ালে বিভিন্ন কারুকাজ চোখে পড়ে। মন্দিরটি তিনতলা বিশিষ্ট এবং উচ্চতায় ৬০ ফুট। ভেতরে অনেকগুলো
কুঠুরী চোখে পড়ে। মন্দিরটি পিরামিড আকৃতির এবং রত্নগুলো ধনুকের মত বাঁকানো। শোনা
যায় আশেপাশে আরো ৯ টি মন্দির ছিল কিন্তু এখন সেগুলো আর অবশিষ্ট নেই। মূল মন্দিরের
পাশে একটি দুর্গামন্দির ও একটি শিবমন্দির আছে। এখানে মোট
১২ টি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ ছিল কিন্তু বর্তমানে মাত্র একটি অবশিষ্ট আছে। মন্দিরের
দোতলায় স্বর্ণের তৈরী রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি ছিল। ইট-সুরকির
মিশ্রনে তৈরী মন্দির। মন্দিরের দেয়ালে লতাগুল্ম গজিয়ে তার প্রাচীনত্ব আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
মূল মন্দিরের পাশে যে দোতলা ভোগ মন্দির আছে সেটি ১৭৮৮
খ্রিস্টাব্দে রাধাচরণ দাস নির্মাণ করেন। কথিত আছে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব একবার এই
মন্দির পরিদর্শনে এসেছিলেন এবং এখানে প্রায় দুই মাস অবস্থান করেন। মন্দিরের পাশে একটি
ছোট দীঘি আছে। এই মন্দির নিয়ে অনেক অতিলৌকিক কাহিনীও প্রচলিত আছে। অনেকের ধারণা
এটি মাত্র এক রাতের মধ্যেই নির্মিত হয়। এই মন্দিরগুচ্ছের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ
করবে। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সোনাবাড়িয়া গ্রামের এই প্রাচীন মন্দির।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
মন্দিরটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছে যদি তা সংরক্ষণের তেমন
কোন উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা বা যেকোন স্থান থেকে প্রথমে যশোর হয়ে কলারোয়ায় আসবেন। কলারোয়া থেকে সোনাবাড়িয়া গ্রাম মাত্র ৭ কিলোমিটার। অথবা আপনি যদি সাতক্ষীরা হয়ে আসেন সেক্ষেত্রে ঝাউডাংগায় নেমে গ্রামের ভিতর দিয়ে সোনাবাড়িয়া মাত্র ১১ কিলোমিটার।
No comments:
Post a Comment